একটি মৃত্যু : কিছু জরুরী ভাবনা

গত ২১ ডিসেম্বর ২০১২ রোজ জুমাবার জুমার আজানের সময় আমার শ্বশুর ইন্তেকাল করেন। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। (তাঁর ভাষায়) ‘আলেম’ (আসলে তালিবুল ইলম) জামাই পেয়ে তাঁর তৃপ্তি ও গর্বের অন্ত ছিল না। পুত্রবৎ জামাই তাঁর জানাযার সালাত পড়াবে বলে তিনি কতবারই না আগাম তৃপ্তি ও মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন। সাতদিন আগে মৃত্যুশয্যা ও বাকরুদ্ধ হবার বার্তা শুনে তাঁর মেয়েসহ ছুটে এলাম। শিয়রে দাঁড়াতেই বোবা কান্নায় চোখ ভেসে দিলেন। মৃত্যুকালে যদি তাঁর পাশে না থাকতে পারি সে শংকায় তিনবার প্রস্তুতি নিয়েও ঢাকায় যাই নি। কেন জানি মন টানছিল না। মনে হচ্ছিল আমি যাওয়া মাত্র যদি তিনি চলে যান। স্নেহের ‘পুত্র’কে ডেকে কাছে না পান। মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ ভাইয়ের মতো নেককার মানুষের পর আমার মনও বলছিল আমাদের নির্বিবাদী অতি সাদাসিধে মুরব্বী হয়তো জুমাবারেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন।

তারপর এলো সেই জুমাবার। আলালপুরের সফল ব্যবসায়ী মাওলানা এবং হবু ড. (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন) মোস্তফা ভাইয়ের বহুল উচ্চারিত দাবি, ‘শুক্রবার আপনি ময়মনসিংহে থাকলে অবশ্যই জুমা পড়াতে হবে আমাদের মসজিদে’। তাঁর দাবি আর লাবীব আব্দুল্লাহ ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে সেখানেই জুমা পড়ার সিদ্ধান্ত হলো। আমার লাবীব ভাইয়ের সহযাত্রী হবার বার্তা পেয়ে আরও কয়েকজন সুহৃদ ও বন্ধু মাওলানা আমাদের সঙ্গী হলেন। গোসল সেরে দৌড়ে বের হলাম জুমা পড়াবার তাগিদে। গেট পেরিয়ে রাস্তামুখো হতে কেন যেন মন পেছনে টান দিল। বাসায় ফিরে এসে তাঁর চন্দ্রানন মুখে হাত বুলিয়ে বললাম, আব্বা, আপনি কী বলছেন? অস্ফূট স্বরে বললেন, ‘আল্লাহ’। ‘আপনি এটাই বলতে থাকেন আমি নামাজ পড়ে আসি বলে বেরিয়ে গেলাম’। মসজিদে গিয়ে যখন মিম্বারে বসতে যাচ্ছি তখনই ফোনটা কেঁপে উঠল। রিসিভ করার আগেই বুঝলাম কী হয়েছে! সমবেত মুসল্লির বিস্ফোরিত দৃষ্টির সামনে আমাকে পড়তে হলো, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজীঊন’। সেদিনের জুমার ভাষণে আমার আলোচনার বিষয় ছিল, ‘ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা’। মুহূর্তেই তা বদলে হয়ে গেল, ‘মৃত্যু : সকল প্রাণীর অপরিহার্য পরিণতি’।

বাদ মাগরিব নামাজে জানাযা হলো। মৃত্যুর দিন জুমাবার এবং জানাযায় মুসল্লির সংখ্যা দেখে বেদনার মধ্যেও সুখ অনুভব করলাম। মরহুমের প্রত্যাশা মতো নামাজ পড়ানোর সৌভাগ্যের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম। বাসার সবাইকে শোক-কান্না ভুলে তাঁর জন্য দো‘আ করতে বলা হলো। কবরস্থ করা থেকে নিয়ে এখানে কাটানো বাকি দিনগুলোয় স্থানীয় অনেক কুসংস্কার ও কুপ্রথা দেখলাম। সাধ্যমত সংশোধন ও প্রতিহত করার চেষ্টা করলাম। তথ্যপ্রযুক্তির এই চরমোৎকর্ষের যুগেও মানুষ যে ধর্মীয় নিরেট জ্ঞান থেকে এত দূরে তা ভেবে যুগপৎ বেদনা এবং দাওয়াতী কাজ এবং লেখালেখিতে সক্রিয় হবার আরও প্রেরণা বোধ করলাম।

মৃত্যুর দ্বিতীয় দিন বাদ মাগরিব গেলাম শ্যালককে নিয়ে কবরস্থানে। শীতের তীব্রতায় সারাদেশ যখন জবুথবু, আমাদের মতো কর্মচঞ্চল জোয়ানরাও যখন বাধ্য হয়ে ঘরমুখো, তখন অশীতিপর শ্বশুরকে এই নিঃসঙ্গ কবরে শোয়ানোর সদ্যস্মৃতি ভাবনার জগতে ঝড় তুলল। ব্রহ্মপুত্র নদীঘেঁষা কবরস্থানে ঢুকে প্রথমে দেখলাম কেউ নেই। বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। কুয়াশাচ্ছন্ন কবরের কাছে গিয়ে যখন সুন্নাত মোতাবেক কাজ সারছিলাম, তখন নদীর শীতল জলচুম্বন করা বাতাস যেন শরীরে সুইয়ের মতো বিঁধতে লাগলো। অথচ হায়, এখানেই তো চব্বিশ ঘন্টা আগে আমাদের পরম প্রিয় শ্বশুরকে মাটির কাঁচা কবরে রেখে গেলাম। অবধারিত ওই সাদা পোশাক ছাড়া তাকে শীতবস্ত্র দেবার কোনো সুযোগ ছিল না সন্তানদের। যারা গতকালও তাঁর সুখের জন্য মুহূর্তে পানির মতো টাকা ঢেলেছে, মাটি বিছিয়ে একে একে তারা সবাই বিদায় নিয়েছে।

আমার নাতিদীর্ঘ জীবনে নিকটাত্মীয় কাউকে কবরে শোয়ানোর সুযোগ ঘটে নি। শ্বশুরকে কবরে শোয়াতে গিয়ে বুঝলাম এ কেমন নিঠুর সত্য। আজ আবার এ সত্যের মুখোমুখী হয়ে স্থির থাকতে পারলাম না। গতকাল লাশ দেখে সবার কান্নার স্রোতের বিপরীতে যেখানে কর্তব্যে অটল ছিলাম। আজ এ শীতার্ত সন্ধ্যায় কবরের কাছে সেই সংযমের যেন বাঁধ ভেঙ্গে গেল। শিকড় সাহিত্য মাহফিলের অফিসে প্রাণবন্ত সাহিত্য আড্ডার লোভনীয় হাতছানিতেও সাড়া দিতে পারলাম না। রাতে শোবার আগ পর্যন্ত চোখের অবিরল ধারা অবিরলই থাকল। কেবল স্ত্রীর কাছেই ব্যক্ত করলাম এ বাঁধহীন কান্নার আসল কারণ।

পবিত্র কুরআনে কতবার পড়লাম,

﴿كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَيۡرِ فِتۡنَةٗۖ وَإِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٣٥﴾ [الانبياء: ٣٥]

‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।’ {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫} -এর মতো কুরআনের অমীয় বাণী কতবার পড়েছি।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ»

‘তোমরা সকল স্বাদের বিনাশকারী মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করো।’ [তিরমিযী : ২৩০৭; নাসাঈ : ১৮২৪]

এমন বাণীও পড়েছি বহুবার। কতবার মানুষের কাছে মৃত্যুর বাস্তবতা ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি, লিখেছি একাধিক লেখা, একবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরেও এসেছি; কিন্তু আজ যেভাবে মৃত্যুকে অনুভব করলাম, কবরের এই নিঃসঙ্গ দৃশ্য যেভাবে চিন্তার জগতে সাইমুমের সূচনা করলো, তা আগে হয় নি। শুনেছি ও পড়েছি- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় জামাতা তৃতীয় খলীফা ‘উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন কোনো কবরের পাশ দিয়ে যেতেন, তিনি এত বেশি কাঁদতেন যে তাঁর গণ্ড ও শ্মশ্রু বেয়ে বিপুল ধারায় অশ্রু নেমে আসত। আজ সম্যক উপলব্ধি হলো, কেন তিনি এভাবে কাঁদতেন। কেন তিনি এত অশ্রুপাত করতেন।

বড় আজব ব্যাপার হলো, আর সবার মতো আমিও হয়তো কদিন পর ভুলে যাব এসব অনুভূতির কথা! আবারও আমার কাছে এক সময় পার্থিব জীবন ও জগত বড় হয়ে উঠবে! নশ্বর জীবনের মোহে আবারও হয়তো পাপের সংস্পর্শে চলে যাব। মুক্ত থাকতে পারব না গুনাহের ছোবল থেকে।

পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি ও প্রখ্যাত আলেমে দীন মাওলানা তাকী উসমানী বলেছেন, মানুষ এ যাবত অনেক কিছু অস্বীকার করেছে। জন্মদাতা পিতামাতাকে অস্বীকার করেছে। পিতৃতুল্য শিক্ষককে অস্বীকার করেছে। পৃথিবীর বহু উপকারীর উপকার অস্বীকার করেছে। এমনকি খোদ তার স্রষ্টা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে; কিন্তু মৃত্যুকে কেউ অস্বীকার করে নি। মৃত্যুকে অস্বীকারের মতো মূঢ়তা কেউ দেখায় নি কোনোদিন। পাঁড় নাস্তিকও এ জায়গায় আস্তিকের সমান্তরাল ভাবনায় উপনীত। কিন্তু হায়, এ মৃত্যুকেই কিনা আমরা ভুলে থাকি! হাজার মৃত্যু দেখে, প্রিয় স্বজনকে নিজ হাতে কবরে নামিয়েও আমাদের মৃত্যুর চেতনা জাগ্রত হয় না। শাশ্বত মৃত্যুর চেয়ে কিনা বড় হয়ে ওঠে আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবন-সংসার!

বলতে দ্বিধা নেই মুহুর্মুহু মৃত্যুর স্মরণ আর মৃত্যুর তেতো বাস্তবতার নিত্যনতুন উপলব্ধিই পারে আমাদের গুনাহের স্পর্শ থেকে বাঁচাতে। দুনিয়ার জীবনের যাবতীয় লোভ-লালসা আর হিংসা-পরশ্রীকাতরতার মতো অনেক কুপ্রবৃত্তিকে সংযত করতে। সব ধরনের অবাধ্যতা পরিহার করে এক আল্লাহর অনুগত এবং নির্দেশ মতো জীবন যাপন করতে।

হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মৃত্যুর যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফীক দিন। আমাদেরকে শামিল করুন আপনি মুত্তাকী বান্দাদের কাতারে। নসীব করুন ঈমানের সঙ্গে এবং শাহাদাতের মৃত্যু। আমীন।
আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

দীনী কাজ সহজিকরণে কম্পিউটার

কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সাধারণত সংবাদের শিরোনামে আসে নেতিবাচক খবরের জন্য। এসব পড়ে প্রযুক্তির এ দুই দিগন্ত সম্পর্কে নাওয়াকিফ লোকেরা ভাবেন কম্পিউটার-ইন্টারনেট মানেই নেতিবাচক কিছু। তাঁদের এ ধারণা একেবারেই অমূলক। এ দুয়ের ইতিবাচক ও কল্যাণকর দিকগুলো জানলে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি যে সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে তা হলফ করেই বলা যায়। আপনি যদি হন কোনো বিদগ্ধ গবেষক কিংবা প্রাজ্ঞ আলেম তথা ফকীহ বা মুহাদ্দিস তবে কম্পউটার হতে পারে আপনার জন্য এক অকল্পনীয় উপকারী বন্ধু। উদার অকৃপণ সহযোগী। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে নিয়ে যে পেশারই হোন না কেন কম্পিউটার হতে পারে আপনার বিশ্বস্ত সহায়তাকারী। তাই পৃথিবীর তাবৎ দেশের মানুষ এই যন্ত্রটির ওপর নির্ভর করছেন নির্দ্বিধায়। বিশ্বে বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটি। (দৈনিক প্রথম আলো : ৮/৭/২০১২)

প্রথমেই আমাদের মাথা থেকে কম্পিউটার সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তার ভূত তাড়াতে হবে। প্রতিটি বস্তুরই ভালো-মন্দ দিক থাকে। বিষ কেন তৈরি হয়? মানুষ মারার জন্য? নাহ, মানুষ বাঁচানোর জন্যই এর সৃষ্টি। বিষ দিয়ে বিষধরকে মেরে মানুষের জীবন বাঁচাতে হয়। কিন্তু মানুষের ভুল ব্যবহারের কারণে তা হয়ে ওঠে মানুষের প্রাণ হরণকারী। অতএব দোষ বিষের নয়; এর ব্যবহারকারীর। একটি ধারালো বটি দিয়ে আপনি তরকারি কাটবেন নাকি মানুষের গর্দান উড়িয়ে দেবেন সে সিদ্ধান্ত তো আপনাকেই গ্রহণ করতে হবে। মানুষ মারা যাবে বলে তো আর ঘর-সংসার থেকে প্রয়োজনীয় এই ধাতবকে বিতাড়িত করতে পারেন না। তাহলে তরকারি ছাড়াই ভাত খেতে হবে। কম্পিউটার-ইন্টারনেটের ব্যাপারটিও অনেকটা সে রকম। এর ভালো-মন্দ নির্ভর করবে ব্যবহারকারীর ওপর। অতএব কম্পিউটার-ইন্টারনেটকে মন্দ না ঠাওরে নেতিবাচক ব্যবহার রোধ করতে হবে। সমালোচনা করলে করতে হবে এর অপারেটরের। প্রচলিত বাগধারার বিপরীতে বলা যায় পাপকে নয় পাপীকে ঘৃণা করুন।

আমাদের শুরুতেই বুঝে নিতে হবে, বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার এমন এক প্রযুক্তির নাম পৃথিবীর সবকিছুতেই যার সাহায্য অপরিহার্য। যার অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীর সব যন্ত্রই বর্তমানে কম্পিউটারাইজড। কম্পিউটারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাহায্যে পরিচালিত। লেখাপড়া, সাহিত্যচর্চা, সাহিত্য-কলা সবকিছুতেই কম্পিউটার প্রসারিত করেছে তার সাহায্যের হাত। কৃষি, বাণিজ্য, চাকরি থেকে নিয়ে হেন কোনো পেশা নেই উন্নত বিশ্বে যাতে কম্পিউটারের সাহায্য নেয়া হয় না। ক্ষুদে ক্যালকুলেটর আর মোবাইল থেকে নিয়ে টিভি, রেডিও, সাইকেল, গাড়ি ও রেল, তেমনি যাত্রীবাহী বিমান থেকে নিয়ে সব ধরনের যুদ্ধাস্ত্র, বোমারু বিমান, সাবমেরিন, ট্যাংক-কামান- সবগুলো প্রস্তুত ও পরিচালিনায় কম্পিউটারের সাহায্য গ্রহণ আজ বিশ্বজনীন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর সবাই যখন কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজের কাজ সহজে ও স্বল্প সময়ে সমাধা করছে তখন কেউ যদি এর বিরুদ্ধে আড়ি করে বসে থাকেন তবে তা হবে দিবালোকের বিরুদ্ধে পেঁচার দশা।

এবার আসুন এর কিছু উপকারী দিক আলোচনা করা যাক :

ভাষা চর্চা বা শিক্ষার ক্ষেত্রে :

গবেষকরা অধিকাংশই একাধিক ভাষা চর্চা করেন। তাদেরকে জানতে হয় বিভিন্ন ভাষা। ভাষা শিক্ষায় কম্পিউটার আপনাকে অভূতপূর্ব সহযোগিতা দেবে। আপনি ভাষা ও সাহিত্য চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় গ্রন্থগুলোর সফট বা পিডিএফ কপি সংগ্রহ করে পড়তে পারেন। এ সম্পর্কিত অডিও শুনে আর ভিডিও দেখে উপকৃত হতে পারেন। আরবী আর ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বা চর্চাই সাধারণত এ দেশের লোকেরা করে থাকেন। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহেই রয়েছে অনেক অডিও। বক্তব্য, শব্দার্থ, শিক্ষামূলক ভিডিও। আরবী শিক্ষার জন্য সৌদি আরব থেকে সংগৃহীত অনেক কিতাব রয়েছে। ইংরেজি শেখার জন্য অডিও ও ভিডিও তো যত্রতত্রই পাওয়া যায়। আপনি বড় বড় কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশ বিক্রেতা এবং অডিও-ভিডিও বিক্রয়ের দোকানগুলোয় যোগাযোগ করে এসব সংগ্রহ করতে পারেন। অনেক ভিডিও কিনতে পাওয়া যায় যেখানে সারা পৃথিবীর সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ও ভ্রমণ স্পট সচিত্র ধারাবিবরণীসহ কিনতে পাওয়া যায়। পেনড্রাইভ বা হার্ডডিস্ক কিনে বিনে পয়সায় (USB drive) ইউএসবি পোর্টে ঢুকিয়ে পরিচিত কারও কাছ থেকে এসব সংগ্রহ করতে পারেন। ইন্টারনেট থেকে ফ্রি ডাইনলোডও করে নিতে পারেন। (ইন্টারনেটে বেশির ভাগ তথ্যই বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যায়। খুব অল্প কিছু সাইট আছে যেখান থেকে কিছু নিতে হলে মূল্য পরিশোধ করতে হয়।) এই সাইটে গেলে আপনি প্রয়োজনীয় অধিকাংশ জিনিসই খুঁজে পাবেন। এটিই পৃথিবীর সবচে বড় ভিডিও শেয়ারিং সাইট : http://www.youtube.com/ ইউটিউবে ঢুকলে আপনি নিম্নোক্ত ক্যাটাগরির তথ্যগুলো খুঁজে পাবেন :

• Trending
• Popular
• Entertainment
• Sports
• News & Politics
• Comedy
• People & Blogs
• Science & Technology
• Gaming
• Howto & Style
• Education
• Pets & Animals
• Autos & Vehicles
• Travel & Events
• Nonprofits & Activism

তবে ইউটিউব ব্যবহারে সাবধান থাকতে হবে; কারণ ভালোর পাশাপাশি মন্দ অনেক কিছুও এখানে থাকে।

সবচে বড় কথা ভাষা শিক্ষার জন্য অভিধান অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিশ্বের প্রচলিত বড় ও জনপ্রিয় ভাষাগুলোর অভিধান ইন্টারনেটে অহরহ পাওয়া যায়। আমাদের বাংলা, ইংরেজি ও আরবীর ডিজিটাল অভিধানও পাওয়া যায় অনেক রকমের এবং নানা বৈশিষ্ট্যের। আর সবচে মজার বিষয় হলো, এসব অভিধানের কোনো কোনোটায় শব্দের উচ্চারণ দেয়া থাকে। আবার কোনোটাতে ছবিও দেয়া থাকে, যা একজন শিক্ষার্থী তথা বিদ্যার্থীকে প্রভূত সহযোগিতা করে। আর শব্দটি যদি ইংরেজি হয় তবে ডান বাটনে ক্লিক করলে দেখবেন Synonyms তথা প্রতিশব্দ লেখা আসছে। ওটাতে ক্লিক করলে আপনি সিলেক্ট করা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ বা সমার্থবোধক শব্দ দেখতে পাবেন। এটি আপনাকে ভাষা শেখায় বড় কাজ দেবে।

গবেষণা ও ইলমী তাহকীকের জন্য :

আপনি যদি হন কোনো গবেষক বা পণ্ডিত তথা বিদ্বান ব্যক্তি, তবে তো আপনার পড়াশোনার মধ্যেই ডুবে থাকতে হয়। নিশ্চয় আপনাকে বিশাল বইয়ের সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে হয়। এর জন্য যেমন প্রয়োজন পর্যাপ্ত জায়গার তেমনি দরকার প্রচুর অর্থের। তদুপরি লেটেস্ট ও সর্বসাম্প্রতিক বইগুলো সংগ্রহ করতে গলধঘর্ম হতে হয়। অনেক সময় প্রচুর টাকা থাকলেও নানা কারণে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। অথচ শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তব যে বই আপনি নিজ শহরে বা দেশে হন্যে হয়েও খুঁজেও সংগ্রহ করতে পারছেন না তা আপনি ইন্টারনেট থেকে কয়েকটি ক্লিকের বিনিময়েই সংগ্রহ করতে পারেন। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে কয়েক হাজার প্রাচীন ও দুর্লভ গ্রন্থসহ প্রায় সবগুলো ইসলামী রেফারেন্স গ্রন্থই রয়েছে।

আপনি যদি হন বিদগ্ধ গবেষক, যাকে প্রতি মুহূর্তে নানা তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় বিচরণ করতে হয়, তবে আপনি (Encyclopedia Britannica) এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা কিংবা (Encarta) এনকার্টার মতো বিশ্বকোষগুলো আপনার কম্পিউটারে সংরক্ষণ করুন। সহজেই আপনি প্রয়োজনীয় নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। শুনলে অবাক হবেন যে ব্রিটানিকার মতো পৃথিবীর সবচে বড় বিশ্বকোষ প্রণয়ন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন, আগামীতে তাঁরা কেবল এর কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ভার্সনই প্রকাশ করবেন। এরপর থেকে এর আর প্রকাশিত বা মুদ্রিত কপি পাওয়া যাবে না। (আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে এই দু’টি সফটওয়ারও আছে। অভিজ্ঞতা থেকেই আমি কথাটা লিখেছি।)

আপনি যদি হন মুহাক্কিক তথা শেকড় সন্ধানী আলেম তাহলে আপনার জন্যও রয়েছে বিশাল দিগন্ত। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি ইচ্ছে করলেও প্রয়োজনীয় শত শত আরবী রেফারেন্স গ্রন্থ ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করতে পারি নি। ভারত-পাকিস্তানের সর্বশেষ অনেক উর্দু কিতাব সংগ্রহ করাই যেখানে চাট্টিখানি কথা নয়, সেখানে সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের গবেষণামূলক দরকারী নতুন-পুরাতন কিতাব সংগ্রহ করা তো অনেক সময় অসম্ভবই হয়ে পড়ে। সরাসরি সৌদি আরব থেকে আনানোর যে খরচ তা শুনে তো রীতিমত আঁতকেই উঠতে হয়। ইলমের তীব্র পিপাসুরাও এখানে এসে হাল ছেড়ে দেন। আলহামদুলিল্লাহ, আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের কম্পিউটারেই যখন ইচ্ছে তখনই প্রয়োজনীয় যে কোনো কিতাব ডাইনলোড করে নিতে পারেন। আরবের আলেমগণই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা নিজেদের সকল গ্রন্থই ইন্টারনেটে বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। বর্তমান বা অতীতের বড় বড় আলেমদের খুব কম সংখ্যক কিতাবই পাবেন ইন্টারনেটে তারা যা সবার জন্য অবারিত করে দেন নি।

যারা মুফতী বা মুহাদ্দিস কিংবা আলেমে দীন তাঁদের জন্য কম্পিউটার অপরিহার্য করে দিয়েছে আরবদের আবিষ্কৃত একটি সফটওয়ার। সেটি মূলত একটি বিশাল লাইব্রেরি। যার নাম (المكتبة الشاملة) ‘মাকতাবা শামেলা’ বা সুবিস্তৃত ডিজিটাল লাইব্রেরি’। আদতেই তা এক বিশাল লাইব্রেরি। ধরুন আপনি একটি ফতোয়া লিখতে যাচ্ছেন কিংবা কোনো ইলমী তথা গবেষণামূলক নিবন্ধ বা গ্রন্থ প্রস্তুত করতে মনস্থ করেছেন তাহলে আপনাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক রেফারেন্স গ্রন্থ সংগ্রহ করতে হবে। তাতে সরবরাহকৃত প্রতিটি তথ্যের যেমন ‘মাসদার’ বা সূত্র জানতে হবে তেমনি তার সত্যাসত্যও নিরূপণ করতে হবে। আপনাকে এর জন্য যেমন অনেক লম্বা সময় দিতে হবে তেমনি প্রয়োজনীয় গ্রন্থগুলোও আপনার সংগ্রহে থাকতে হবে। মাকতাবা শামেলা আপনাকে এ ক্ষেত্রে অতুলনীয় সহযোগিতা দেবে। এতে পাবেন আপনি কুরআন, তাফসীর, হাদীস, শুরুহুল হাদীস (হাদীসের ব্যাখ্যা), ফিকহ, উসূলে ফিকহ, ফতোয়া ও উলূমুল হাদীসের যাবতীয় রেফারেন্স গ্রন্থ। আপনার কম্পিউটারে এই ডিজিটাল লাইব্রেরি সন্নিবেশিত করে আপনি আকাশ হাতে পাবার আনন্দ পেতে পারেন।

যেমন ধরুন আপনি কোনো দীনী বিষয়ে নিবন্ধ লিখছেন, এখন অবশ্যই এতে পবিত্র কুরআনের আয়াত থাকবে। থাকবে তার ব্যাখ্যা বুঝতে সঠিক তাফসীর। তেমনি থাকবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাসূলের হাদীস, ফিকহবিদ ও মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য। এসব সংগ্রহ করতে আর তা যাচাই-বাছাই করতে আপনাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। প্রথমে আপনাকে তথ্যটি কোন কিতাবে আছে তা জানতে হবে। তারপর আপনাকে ওই কিতাব সংগ্রহ করতে হবে। এরপর আপনাকে পাতা উল্টে উল্টে কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি কোন পাতায় আছে তা প্রথমে জানতে হবে এবং একেএকে পাতা উল্টে সে পর্যন্ত যেতে হবে। তারপরও আপনাকে আপনার ওই লেখায় এই উদ্ধৃতির বাক্য বা শব্দগুলো সংযোজন করতে হবে নির্ভুলভাবে। বলাইবাহুল্য, এখানে অনেকগুলো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ করতে হবে। অথচ এর সবগুলো কাজই আপনাকে নিমিষে করে দেবে এই শামেলা নামক ডিজিটাল লাইব্রেরি। আয়াত বা কাঙ্ক্ষিত বাক্যের সম্ভাব্য শব্দ লিখে প্রয়োজনীয় ক্যাটাগরিতে সার্চ দিলেই ওই কিতাব, তার পৃষ্ঠা নাম্বার ও খণ্ড নাম্বারসহ হুবহু আপনাকে সরবরাহ করবে। আপনি শুধু উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে প্রয়োজনীয় অংশটুকু আপনার লেখায় সংযোজন করবেন। আয়াতের ব্যাখ্যা কিংবা হাদীসের তবকা বা স্তর ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আপনি সহজেই নিজের ইলম প্রচার করতে পারবেন এবং নিজেও নির্ভুল ইসলামী জ্ঞান হাসিল করতে পারবেন।

শিক্ষামূলক কাজের জন্য :

শিক্ষামূলক কাজের জন্যও কম্পিউটার আপনাকে দেবে অকল্পনীয় সব সহযোগিতা। উপরে যেমনটি বলা হয়েছে সে উপায়ে আপনি আপনার বিষয় সংশ্লিষ্ট অডিও, ভিডিও সংগ্রহ করবেন। নানা লেসন পড়বেন আর শুনবেন। আর আপনার সার্বিক সহযোগিতায় তো ডিজিটাল ডিকশনারিগুলো থাকছেই। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকগণ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি অনেক শব্দের উচ্চারণে ভুল করে থাকেন। নানা কারণে তাঁদের কোনো কোনো শব্দের উচ্চারণে আঞ্চলিকতা কিংবা অশুদ্ধতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, এই সমস্যা দূরীকরণে অনেক অভিধানে উচ্চারণ শোনারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভালোভাবে শব্দার্থ হৃদয়াঙ্গমর করতে যেন পারেন সে জন্য কোনো কোনোটায় সংশ্লিষ্ট চিত্র বা ছবিও দেয়া হয়।

সিংহভাগ মানুষই লেখাপড়া বা ভাষাচর্চার ক্ষেত্রে বানান নিয়ে ঝামেলায় পড়েন, তাদের জন্য ইংরেজি ও বাংলায় রয়েছে দারুণ ব্যবস্থা। যে কোনো ডকুমেন্ট বা লেখায় ইংরেজি যে কোনো শব্দ লেখার পর (Enter) ‘এন্টার’ বাটন চাপলে শব্দটির বানান ভুল থাকলে তাতে লাল আন্ডার লাইন থাকবে। তখন ডান বাটন ক্লিক করলেই এর সম্ভাব্য সঠিক বানান দেখাবে। সেটাতে ক্লিক করলে অটোমেটিক আপনার বানান শুদ্ধ হয়ে যাবে। সম্প্রতি বাংলা স্পেল চেকারও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘সৃষ্টি অফিস টুলস’, ‘ধ্রুব বাংলা স্পেল চেকার’ প্রভৃতি স্পেল চেকার পাওয়া যায়। নিম্নোক্ত ঠিকানায় গিয়ে ইন্টারনেট থেকে ফ্রি বাংলা স্পেল চেকার ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এই সফটয়ারটিকে নির্দেশ দিলে আপনার লেখায় থেকে যাওয়া বানান ভুলগুলো চিহ্নিত করবে। একইসঙ্গে শব্দটির সম্ভাব্য সবগুলো শুদ্ধ বানানও প্রদর্শন করবে। http://www.omicronlab.com/avro-keyboard-download.html

আপনি যদি আগ্রহী ছাত্র হন তবে প্রচুর সাধারণ জ্ঞানের উপাত্ত কম্পিউটারে সংগ্রহ করতে পারেন। তারপর নিয়মিত তা থেকে আপনার ভেতরের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবেন। সাধারণ জ্ঞান বাড়ানোর মত প্রচুর বই পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা বা ব্যক্তির ওপর তৈরি করা সচিত্র প্রতিবেদন ও ডকুমেন্টারি দেখেও নিজের জ্ঞানের দিগন্তকে প্রসারিত করতে পারবেন। পারবেন অন্য দশজন থেকে এগিয়ে যেতে। কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচে বেশি উপকৃত হতে পারেন আমাদের ধর্মীয় শিক্ষায় আগ্রহী মা-বোনেরা। পর্দা রক্ষা করে দারুণ উপায়ে আপনারা সরাসরি দীনী ইলম হাসিল করতে পারেন। ইতোমধ্যে এ ব্যবস্থা আরব বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছে। আর তা হলো, ছেলেদের সামনে শিক্ষক ক্লাস নেবেন, তাদেরকে সামনে রেখে বোর্ডে পাঠ্য বিষয় বুঝিয়ে দেবেন আর কম্পিউটারে প্রজেক্টর লাগিয়ে কাছে বা দূরে অবস্থিত মেয়েদের পৃথক কক্ষে বসে তারা এই পাঠ সরাসরি দেখতে পারবেন। অথচ এই মেয়েদের কেউ দেখতে পারবেন না।

দীনী ইলম হাসিলের ক্ষেত্রে :

আমাদের ব্যস্ত জীবনে অনেক সময়ই সম্ভব হয় না বড় বড় আলেমদের সান্নিধ্যে গিয়ে ইলম হাসিল করা। কম্পিউটার আমাদের জন্য এ ক্ষেত্রে দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছে। ঘরে বসে আমরা তাঁদের আলোচনা ও ওয়াজ-নসীহতের সিডি সংগ্রহ করে কিংবা কারো সিডি থেকে বিনামূল্যে কপি করে নিজে শুনে উপকৃত হতে পারি। বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রায় সব আলেম-উলামার ওয়াজের সিডিই এখন সর্বত্র পাওয়া যায়। কম্পিউটারের দোকানগুলোয় ‘ডাউনলোড করা হয়’ লিখে দেয়া থাকে। সেখানে গিয়েও আপনি এসব দীনী আলোচনা আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলের জন্য সংগ্রহ করতে পারেন। কিংবা অন্যের কম্পিউটার থেকে সিডি রাইট করেও নিজের কম্পিউটারে নিতে পারেন।

অনেক সময় জানার জন্য কিংবা লেখায় উদ্ধৃতি দেওয়া কিংবা তাহকীক বা গবেষণার ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের আয়াত ব্যবহার করতে হয়, আয়াতের নাম্বার, সূরা ইত্যাদি জানতে ও উল্লেখ করতে হয়। এখন যারা পবিত্র কুরআনের হাফেজ নন, তবে মোটামুটি নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করেন এর অর্থ বুঝেন, তাঁর ক্ষেত্রে দেখা যায় হয়তো আয়াতের একটি শব্দ বা কিছু অংশ মনে পড়ে। সূরা বা আয়াত নাম্বার খুঁজে বের করতে হাফেজ সাহেবকে জিজ্ঞেস করতে হয়, নয়তো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, তাঁর জন্য কম্পিউটারে রয়েছে দারুণ ব্যবস্থা। আপনি ‘কুরআন সার্চ’ প্রোগ্রাম বিশিষ্ট কোনো সফটওয়ার কারো কাছ থেকে সংগ্রহ করুন। কিংবা সরাসরি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে ডাইনলোড করে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করুন। এটি শুধু আপনাকে আয়াত খুঁজে বের করতেই সহযোগিতা করবে না। স্বতন্ত্র রীতির কারণে কুরআনের আয়াত যে কেউ লিখতে বা টাইপ করতে যেখানে প্রায় ব্যক্তিই টুকিটাকি জানা অজানা ভুল করেন সেখানে আপনি নির্ভুলভাবে আপনার লেখা বা জন গবেষণাপত্রে আয়াত বা উদ্ধৃতি সংযোজন করতে পারবেন।

সুস্থ বিনোদন যোগানোর ক্ষেত্রে :

আপনি কম্পিউটারে পছন্দের সব নির্দোষ ভিডিও সংগ্রহ করবেন আপনার কম্পিউটারে। সময় সুযোগ মত সেগুলো শুনে আপনার বিনোদন তৃষ্ণা মেটাবেন তা দিয়ে। বিশ্বের বড় বড় সব ক্বারী সাহেবের তিলাওয়াত, যেমন মক্কা ও মদীনার মসজিদের বিখ্যাত ইমামগণের হৃদয় জুড়ানো কুরআন তিলাওয়াত, ক্বারী আবদুল বাসেত থেকে নিয়ে বর্তমানের সব বিখ্যাত ক্বারীগণের তিলাওয়াত সংগ্রহ করে আপনি নিজের জীবনকে রাঙাতে পারেন পবিত্র বিভায়। তাছাড়া দেশীয়সহ আন্তর্জাতিক সব ইসলামী শিল্পীদের হৃদয়কাড়া সব গান ও আবৃত্তিও আপনি সংগ্রহ করতে পারেন উপরে বলা আসা পন্থাগুলো অবলম্বন করে।

আপনি ঐতিহাসিক নানা ঘটনার তথ্য ও ইসলামী ইতিহাসের বিখ্যাত সব ঘটনার বিবরণমূলক বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র দেখতে পারেন। মজার মজার সব ইসলামী কার্টুন পাওয়া যায়। এসবও সংগ্রহ করতে পারেন উপর্যুক্ত পন্থায়। এর মাধ্যমে আপনি যেমন সুস্থ বিনোদন চাহিদা মেটাতে পারবেন, তেমনি পারবেন নিজের জ্ঞান ভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ এবং নিজেকে আরও শাণিত করতে। তবে এসব কার্টুন ও ডকুমেন্টারি সাধারণ ইংরেজি ও আরবী ভাষায় বেশি পাওয়া যায়। বাংলাতে কিছু ডাবিংকৃত ভিডিও পাওয়া যায় রাজধানীর সমৃদ্ধ সব ইসলামী প্রকাশনী পাড়াগুলোয়। ইন্টারনেটে ঢুকে islamic cartoons লিখে সার্চ দিলে অনেক সুন্দর সুন্দর শিক্ষণীয় কার্টুনের লিংক খুঁজে পাবেন। সেগুলো থেকে বাছাই করে আপনি পছন্দের কার্টুন ডাইনলোড করে নিতে পারেন। সেগুলো আপনি নিজের কম্পিউটারে সেভ করে রেখে পছন্দ মত সময়ে দেখবেন এবং অন্যকে দেখতে দেবেন।

লেখালেখির ক্ষেত্রে :

যারা লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চা করেন তারা সবাই জানেন প্রকৃতপক্ষে এ কাজটি কত কঠিন। একজন লেখককে তাঁর এ সহজাত প্রতিভা বিকাশে এবং জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে কতটা ত্যাগ, সংযম ও অখণ্ড অধ্যাবসায় চালিয়ে যেতে হয় তা শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই জানেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, একটি লেখা তৈরি করতে গিয়ে কখনো ওই কাগজ হারিয়ে ফেলেছি, কখনো একটি তথ্যের জন্য শ্রমসাধ্য প্রায় পূর্ণাঙ্গ একটি লেখা দিনের পর দিন পড়ে থেকেছে। কখনো দেখা গেছে, বহু কষ্টে একটি রচনা প্রস্তুত করেছি কিন্তু সময় মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় নি, কিংবা কিছু অর্থ ব্যয় করার পরও সেকেলে ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ডাক ব্যবস্থার অভিশাপে তা আর সম্পাদকের হাত পর্যন্ত যেতে পারেনি। আরও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, কোনো কপি নিজের কাছে না থাকায় এমন অনেক লেখা চিরতরে হারিয়ে গেছে। তা আর কখনো উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আমার অনুল্লেখযোগ্য লেখালেখি জীবনে প্রথম যে বইটি আমি অনুবাদ করেছি অনেক আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে, সে পাণ্ডুলিপিটি আমি উদ্ধার করতে পারছি না। তাই চাইলেও পারছি না সেটি প্রকাশ করতে, কিংবা অন্তত তার চেহারাখানি দেখতে।

অথচ এই কম্পিউটার এসে অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাল। আগে একটি খসড়া করতে হত, তারপর সেটি ফ্রেস করে প্রেরণযোগ্য করতে হত। এখন সরাসরি কম্পিউটারে লিখি। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের কথা জানি তাঁরা সরাসরি কম্পিউটারেই তাদের লেখা প্রস্তুত করেন। অবস্থা এমনকি এমন দাঁড়িয়েছে যে হাতে যেন লেখা বেরুতেই চায় না। কম্পিউটারে বসলেই ছোটে ফোয়ারা। এর কারণ, লেখা তৈরির ক্ষেত্রে কম্পিউটারের সরবরাহ করা নানা সুবিধা। যেমন : লিখতে গিয়ে অনেক সময় বক্তব্য আগপাছ করতে হয়, কোনো শব্দ বা বাক্য বারবার ব্যবহার করতে হয়, সেক্ষেত্রে কম্পিউটারে এ কাজ করলে অনেক সুবিধে হয়। কম্পিউটারকে কমান্ড দিয়ে কাজগুলো সহজেই করা যায়। কম্পিউটারে লেখার মধ্যে কাটাকাটি বলে কিছু চোখে পড়ে না। যদি কম্পিউটারটি নিরাপদ হয় তাহলে লেখা হারানোর চিন্তা করতে হয় না। সহজেই তা সংরক্ষণ করা যায়। ইচ্ছে হলে কিংবা প্রয়োজনে একটি লেখা বিভিন্ন জায়গায় বারবার প্রেরণ করা যায়। পেনড্রাইভ বা সিডিতে কপি করে আপনি লেখাটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন। অন্যের কাছে প্রেরণও করতে পারেন। কম্পিউটারের সঠিক ব্যবহারবিধি না জানা থাকলে হয়তো ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে আপনার ডকুমেন্ট হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ কারণে পেনড্রাইভে বা সিডিতে রাইট করে রাখলে আপনার ডকুমেন্টের নিরাপত্তা নিয়ে আর তেমন ভাবতে হবে না। তবে যদি সেই সিডি বা পেনড্রাইভও আপনার কাছে হারিয়ে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে নিরাপদ মনে না হয় তাহলে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে লেখাটি স্থায়ীভাবে মেইল এড্রেসে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে করে কোনোদিন লেখাটি হারাবে না। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বসে কম্পিউটার বা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে লেখাটি উদ্ধার করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় ঠিকানায় সরাসরি প্রেরণ করতে পারবেন। একটি নির্দিষ্ট ফাইলে ধারাবাহিকভাবে এক বা একাধিক বিষয়ে লিখতে থাকলে অজ্ঞাতেই বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হয়ে যায়। বই লিখে তা বয়ে বেরাতে হয় না। এক প্রকাশকের সঙ্গে কথা না মিললে কয়েকটি ক্লিক করেই তা একাধিক প্রকাশক বা ব্যক্তির কাছে প্রেরণ করা যায়।

প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রে :

প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রে কম্পিউটার কতটা সহায়ক তা মনে হয় নতুন করে বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। আধুনিক যে কোনো প্রতিষ্ঠানেই এখন কম্পিউটার নামক বস্তুটি অতি অবশ্যই উপস্থিত থাকে। ব্যবসায়িক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলে এ বিনে তো অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না যেন। হিসাব-নিকাশ ও অফিসিয়াল প্রকাশযোগ্য বা গোপন নানা তথ্যাদি কম্পিউটারে লিখে সহজে সংরক্ষণ করা যায়। চাইলে পাসওয়ার্ড দিয়ে সংশ্লিষ্ট ফাইলে অন্যের প্রবেশিধাকার রোধ করা যায়। প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি, প্রচারপত্র, পরিকল্পনা ইত্যাদি আগে লিখিত আকারে থাকত, সেখান থেকে প্রতিবার নতুন করে কষ্ট করে লিখতে বা প্রকাশ করতে হত। আর এখন কম্পিউটারের বদৌলতে এ কাজ আর বারবার করতে হয় না।

আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে কম্পিউটার তো রীতিমত যুগান্তকারী ভূমিকাই রাখছে। ছাত্রজীবনে নিজের শিক্ষকদের দেখেছি কর্তৃপক্ষের বহু চাপাচাপির পর রাত জেগে পরীক্ষার খাতা দেখে দেবার পরও চূড়ান্ত ফল প্রকাশে মাস খানেক লেগে যেত। কখনো প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে হতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার মাত্র সপ্তাহখানেক আগে প্রকাশ করা হত। আর এখন কম্পিউটারের এক্সেল প্রোগ্রামের মাধ্যমে অকল্পনীয় কম সময়ে এ কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে।

অফিস বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে :

আপনি যদি হন কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কিংবা অফিসের এমডি তবে আপনার কাজেও কম্পিউটার সাহায্য করতে প্রস্তুত। প্রতিষ্ঠানের কাজে আপনাকে নিশ্চয় যেতে হয় ব্যাংকে। দেখবেন ব্যাংকের এমডি সাহেব তাঁর কাঁচে ঘেরা কক্ষে বসে নিরবে পর্যবেক্ষণ করছেন অফিসের কে কোন কাজে ব্যস্ত। সিসিটিভির মাধ্যমে আজকাল বড় বড় শপিং মলগুলোতেও এসবের পরিচালকরা নিজ জায়গায় বসে নিরবে সব ক্রেতা ও দর্শকসহ সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছেন। আমাদের রাজধানী ঢাকা শহরসহ উন্নত বিশ্বের সকল সড়কে এই কম্পিউটারের মাধ্যমে ট্রাফিক সিগন্যাল দেয়া যায়। দায়িত্বশীলগণ পথ-ঘাট ও যানবাহন চলাচল পর্যবেক্ষণ করেন। অফিসে যদি সবাই কাজ করেন কম্পিউটারে তাহলে কম্পিউটারে বসে কে কোন কাজ করছে তা আপনি নিজ রুমে বসেই পর্যবেক্ষণ করতে পারেন কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে।

পরিতাপের বিষয় হলো, অনেকে কেবল না জানা বা ইচ্ছা না করার কারণে এই কম্পিউটার নামক যন্ত্র কিনে এতে শুধু গান শোনা কিংবা নাটক/সিনেমা দেখা ছাড়া কোনো কাজে লাগান না। কেউ কেউ নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চাকেও কম্পিউটার কিনে দেন, সে শুধু গেমস খেলা ছাড়া আর কোনো কাজে একে লাগায় না। ইদানীং আবার অনেকে বুদ্ধি খাটিয়ে পুরান কম্পিউটারের একখানি মনিটর কেনেন। তারপর তাতে টিভি কার্ড লাগিয়ে টেলিভিশন দেখার অতি সখের (?) কাজটি সারেন! হাস্যকর ব্যাপার হলো, কম্পিউটারের এমন নেতিবাচক ব্যবহার দেখে অনেকে এই নিরীহ বস্তুটির প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে যান। তারা যে কারো কম্পিউটার ব্যবহারকেই নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন।

বস্তুত পৃথিবীতে যত প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে এবং আগামীতে হবে সবগুলোই আল্লাহর দান। আল্লাহ মানুষকে বুদ্ধি আর প্রকৃতিতে নানা উপাদান দিয়েছেন বলেই ক’দিন পরপর নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। অতএব আমাদের বরং শুকরিয়ার সঙ্গে এসব নেয়ামত ভোগ করা দরকার। আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহে এসবকে কাজে লাগানো উচিত। পক্ষান্তরে প্রযুক্তির প্রতি বিদ্বেষ রাখা মূলত আল্লাহর নেয়ামতকেই অবহেলা বা অস্বীকারের নামান্তর। কেউ যদি অপরাধ করে, আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের অপব্যবহার বা অপপ্রয়োগ করে তবে তার দায় কেবল তার ওপরই বর্তাবে। অন্য কারও ওপর এর বোঝা চাপানো যাবে না। অন্য কাউকে এ দোষে দোষী বানানো যাবে না। নিচের আয়াতগুলোয় দেখুন কত স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কথাগুলো। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ إِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمۡۖ وَلَا يَرۡضَىٰ لِعِبَادِهِ ٱلۡكُفۡرَۖ وَإِن تَشۡكُرُواْ يَرۡضَهُ لَكُمۡۗ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرۡجِعُكُمۡ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَۚ إِنَّهُۥ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ٧ ﴾ [الزمر: ٧]

‘তোমরা যদি কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী; আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না এবং তোমরা যদি শোকর কর তবে তোমাদের জন্য তিনি তা পছন্দ করেন; আর কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করে না। তারপর তোমাদের রবের দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে। তখন তোমরা যে আমল করতে তিনি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় অন্তরে যা আছে তা তিনি সম্যক অবগত’। {সূরা আয-যুমার, আয়াত : ৭}

﴿ مَّنِ ٱهۡتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهۡتَدِي لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيۡهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥ ﴾ [الاسراء: ١٥]

‘যে হিদায়াত গ্রহণ করে, সে তো নিজের জন্যই হিদায়াত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের (স্বার্থের) বিরুদ্ধেই পথভ্রষ্ট হয়। আর কোন বহনকারী অপরের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই’। {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ১৫}

﴿ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ وَإِن تَدۡعُ مُثۡقَلَةٌ إِلَىٰ حِمۡلِهَا لَا يُحۡمَلۡ مِنۡهُ شَيۡءٞ وَلَوۡ كَانَ ذَا قُرۡبَىٰٓۗ إِنَّمَا تُنذِرُ ٱلَّذِينَ يَخۡشَوۡنَ رَبَّهُم بِٱلۡغَيۡبِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَۚ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفۡسِهِۦۚ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلۡمَصِيرُ ١٨ ﴾ [فاطر: ١٨]

‘আর কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না এবং কোন ভারাক্রান্ত ব্যক্তি যদি তার বোঝা বহনের জন্য কাউকে ডাকে তবে তার বোঝার কোন অংশই বহন করা হবে না যদিও সে আত্মীয় হয়; তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করবে যারা তাদের রবকে না দেখেও ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে; আর যে ব্যক্তি পরিশুদ্ধি অর্জন করে সে নিজের জন্যই পরিশুদ্ধি অর্জন করে। আর আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তন’। {সূরা ফাতির, আয়াত : ১৮}

﴿ قُلۡ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِي رَبّٗا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيۡءٖۚ وَلَا تَكۡسِبُ كُلُّ نَفۡسٍ إِلَّا عَلَيۡهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرۡجِعُكُمۡ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ فِيهِ تَخۡتَلِفُونَ ١٦٤ ﴾ [الانعام: ١٦٤]

‘বল, ‘আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন রব অনুসন্ধান করব’ অথচ তিনি সব কিছুর রব’? আর প্রতিটি ব্যক্তি যা অর্জন করে, তা শুধু তারই উপর বর্তায় আর কোন ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না। অতঃপর তোমাদের রবের নিকটই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে সেই সংবাদ দেবেন, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৬৪}

কে কী করছে, কে কম্পিউটার কোন খারাপ কাজে লাগাচ্ছে তার হিসাব রাখা বা তার ওপর বিধান জারি করা আমার দায়িত্ব নয়। তেমনি না জেনে, নিশ্চিত না হয়ে প্রমাণ ব্যতিরেকে কাউকে মন্দ ঠাওরানোও আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦ ﴾ [الاسراء: ٣٦]

‘আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে’। {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬}

কেউ কম্পিউটারে সিনেমা দেখছে বা গুনাহ কামাই করছে দেখে আপনি এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। জাগতিক কোনো কিছু অর্জন যদি আপনার অনায়াস সাধ্য হয় আর তা আপনার উপকার ছাড়া অপকার না করে তবে একে অবজ্ঞা করা কাম্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَاۖ وَأَحۡسِن كَمَآ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٧٧ ﴾ [القصص: ٧٧]

‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’। {সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ৭৭}

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হয়ে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করার তাওফীক দান করুন। কম্পিউটারকে বানিয়ে দিন আমাদের আখেরাতে পদোন্নতির সোপান। আমীন। 


 মূল/সংগ্রহ: ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া ডট নেট থেকে

কুরআনের ভালোবাসায় রুশ নারীর ইসলাম গ্রহণ এবং রুশ ভাষায় কুরআনের ভাষান্তর

বিশ বছরের অধিককাল আগে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তাঁর করা কুরআনের অর্থানুবাদকে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা অন্যতম সেরা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ হিসেবে গণ্য করছেন। তিনিই এগিয়ে এসেছেন রাশিয়ায় কুরআনুল কারীমের ক্ষেত্রে অনেক গবেষণাকারী ও বিজ্ঞজনদের মৃত্যুজনিত অভাব পূরণে।

তিনি হলেন রাশিয়ান নারী ভেলেরিয়া বোরোচভা (Valeria Borochva)। নিজের কুরআন অনুবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত আমাকে তার প্রেমিক বানিয়েছে আর এ ভালোবাসাই আমাকে তা রুশ ভাষায় অনুবাদে অনুপ্রাণিত করেছে।’

ভেলেরিয়া বোরোচভা কিন্তু কোনো আলেমা বা ইসলামবিশেষজ্ঞ নন। ইসলামের আইনশাস্ত্র বা ফিকহ বিষয়েও তিনি কোনো ডিগ্রিধারী নন। হ্যা, তাঁর বিশেষত্ব হলো তিনি রাশিয়ান ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ সমাপ্ত করেছেন। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার ৬০ মিলিয়ন মুসলিমের জন্য যা এক গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি হিসেবে বরিত ও প্রশংসিত হচ্ছে।

আল-আরাবিয়া ডট নেটকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর রুশ ভাষায় মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অনুবাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী সিরিয়ার দামেস্ক শহরে বসবাসকারী এক আরব। তাঁর সঙ্গে আমি ১০ বছর কাটাই দামেস্কে। ইতোপূর্বে আমি আরবী জানতাম না। সেখানেই আরবী শিখি। আরবী শেখার পর সেখানে আমি একটি আরবী-রুশ অভিধান রচনা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার শ্বশুর একজন ধার্মিক পুরুষ ছিলেন। তাঁর একটি বড় লাইব্রেরি ছিল। সেখানে নিয়মিত অধ্যয়নের পাশাপাশি আমি পূর্ণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কুরআন তরজমায় মনোনিবেশ করি। দামেস্ক থেকে ফি বছর মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি গবেষণা একাডেমির উদ্দেশ্যে সফর করতাম। একাডেমিতে ছিল একটি অনুবাদ দপ্তর। দশ পারা অনুবাদ সম্পন্ন করার পর একাডেমির আলেমগণ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন। আরবী ও রুশ ভাষা জানা তিন বিজ্ঞ আরব ও দুই রাশান আলেম সদস্যের এ কমিটি খুব ভালোভাবে আমার তরজমা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।’

বোরোচভা উল্লেখ করেন, প্রথমে এ বোর্ড তাঁর তরজমা সম্পর্কে অনেক টীকা যোগ করেন। পাশাপাশি তাঁরা অনুবাদের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। তাঁরা বলেন, অনুবাদ হয়েছে প্রথম শ্রেণীর। এ কারণেই আমরা এর অধ্যয়ন ও মূল্যায়ন চালিয়ে যেতে পারছি। এর মধ্যে যদি অনেক ভুল-ভ্রান্তি পেতাম তবে পর্যবেক্ষণে আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারতাম না। প্রতিবারই তাঁরা অনুবাদ সম্পর্কে বৈঠক বসতেন এবং এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতেন।’

তিনি জানান, তাঁকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে সিরিয়ায় বসবাসের সুবাদে তা সহজেই ডিঙ্গানো সম্ভব হয়েছে। সিরিয়ার সাবেক মুফতী শায়খ আহমদ কিফতারো এবং তার পুত্র শায়খ মাহমুদ কিফতারো সবসময় তাকে সাহায্য করেছেন। প্রেরণা এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিনিয়ত অনেক বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞেস করেছি। প্রয়োজনীয় সব কিছুই তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। তেমনি ড. যুহাইলিরও সাহায্য নিয়েছি, যার কাছে কুরআনুল কারীমের তাফসীর সংক্রান্ত অনেক কিতাব ছিল।’

তিনি যোগ করেন, ‘বহু আলেম আমাকে সাহায্য করেছেন। ‘আমি ভেলেরিয়া যদি একা একা বসে থাকতাম তাহলে কুরআনের তরজমায় অনেক ভুল হত।’ নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসমানী গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের ভালোবাসাই আমাকে ইসলামে দীক্ষিত হতে প্রেরণা ও চেতনা জুগিয়েছে। আমার বিশ্বাস, খোলা মন নিয়ে যিনিই এ কুরআন শেষ পর্যন্ত পড়বেন, শেষাবধি তাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলতেই হবে।’

অনুবাদের মুদ্রণ ব্যয় সংগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শেখ যায়েদ ইবন সুলতান (আল্লাহ তার ওপর রহমত করুন) আল-আজহার একাডেমির কাছে একটি চিঠি পাঠান, তরজমা যথার্থ কি-না তিনি তা জানতে চান। নিশ্চিত হবার পর ২৫ হাজার কপি অনুবাদ ছাপার খরচ বহনে আগ্রহ প্রকাশ করেন শেখ যায়েদ। এ পর্যন্ত অর্ধ মিলিয়ন কপি অনুবাদ ছাপা হয়েছে। সৌদি আরবের শায়খ খালেদ কাসেমীও অনেক কপি ছাপিয়েছেন। লিবিয়া ও কাতারে থেকেও এ অনুবাদ ছাপা হয়েছে।’
সূত্র : ইন্টারনেট
আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ফেসবুক ব্যবহারে কিছু ইসলামী নির্দেশনা

ফেসবুক ব্যবহারে ইসলামী নির্দেশনা 

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় প্রতিটি মানুষই এখন কম-বেশি ফেসবুক ব্যবহার করেন। ফেসবুক এখন পৃথিবীর অন্যতম আলোচিত বিষয়। ফেসবুক এ জগতের এক নতুন শক্তির নাম। এর মাধ্যমে কোনো দেশে বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। কোথাওবা সরকারের গদি টালমাটাল হচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীরা মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে সহনীয় করে তুলছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই আজ এই ফেসবুক এক আফিমের মতো। পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য তরুণ-তরুণী এর মাধ্যমে অবৈধ সম্পর্ক গড়ছে এবং মিথ্যার রাজত্ব কায়েম করছে। 
তেমনি এর মাধ্যমে হাজারো মুসলিম ভাই-বোন নিজেদের কল্যাণকর চিন্তা ও জনহীতকর ধারণা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশুদ্ধ আকীদা ও চিন্তা-চেতনার প্রসারও সহজ হয়ে গেছে। যখন যে উপলক্ষ আসছে সে সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনা সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে এর মাধ্যমে। ইসলাম ও মানবতার শত্রুরা এতদিন যখন ইন্টারনেটের এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ইচ্ছে মত ইসলাম ও ইসলামের নবী এবং তাঁর আদর্শকে অসম্মান বা অপমান কিংবা তার বিরুদ্ধে বিবেকহীন অপপ্রচার চালিয়েছে কোনো বাধা ছাড়া। আজ তারা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া যাচ্ছে। পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা যাচ্ছে এই ফেসবুকের মাধ্যমে। 
বর্তমানে তাই নেককার মুত্তাকি লোকদেরও দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। কিন্তু জুকারবার্গের এ দুনিয়ায় পা রেখেই তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেক দুরাচারী বা রুচিহীন লোকের উৎপাতের কারণে। অনেকে অযথা অভব্য বাক্য লিখে কিংবা অশালীন ছবি পোস্ট করে নিজের ওয়ালে। আর তা তাদের কাছে ভালো লাগলেও অনেকের কাছেই যে ন্যাক্কারজনক প্রতীয়মান হয় সেদিকে তারা খেয়াল করে না। এদের দেখে দমে গেলে হবে না। চেষ্টা করে যেতে হবে সাধ্যমত ভালো কথা বলে যেতে। সে লক্ষ্যেই বক্ষমান নিবন্ধে আমরা চেষ্টা করব ফেসবুক ব্যবহারের ১০টি ইসলামী নির্দেশিকা তুলে ধরতে। এগুলো মূলত ইসলামের আদর্শ বোধ থেকেই আমাদের সবার খেয়াল করা দরকার। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে বুঝার এবং মানার তাওফীক দান করুন। 
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (1) 
এটা জানা কথা যে পরিমিত লজ্জা নারী চরিত্রকে উচ্চতায় নিয়ে যায়। লজ্জা নারীর বিশেষ ভূষণ বৈ কি। আর লজ্জা খোয়ানোকে তার জন্য একটি দুর্যোগ ভাবা হয়। এটি কলংকিত করাকে এক ধরনের বেইজ্জতি গণ্য করা হয়। 
অতএব আপনি যখন ফেসবুকে শিষ্টাচারের বৃত্ত অতিক্রম করে কোনো মেয়েকে খোশালাপে মেতে উঠতে দেখবেন। তার আলাপ এতোটা রুচিহীন হয় যে তা যেন কোনো পর্নোগ্রাফির দৃশ্য আপনার সামনে দেখতে দাঁড় করিয়ে দেয় অথবা আপনি শিষ্টাচার বা সার্বজনীন রুচি বহির্ভুত দৃশ্যাবলি দেখতে শুরু করেন। কিংবা চোয়াল উন্মুক্ত করে সে বলছে, ‘হে আমার জীবন, আমার প্রাণপ্রিয়, হে আমার হৃদয়’… ইত্যাদি তবে প্রিয় পাঠক, আপনি তখনই নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে মেয়েটি ‘নির্লজ্জ। লজ্জা বলতে তার কিছু নেই!’
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (2)
এটা সর্বসম্মত বিষয় যে প্রথম যা ব্যক্তির চিন্তা, তার সংস্কৃতি এবং তার আচার-ব্যবহারের পরিচয় প্রদান করে তা হলো তার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলো। অতএব যখন আপনি ফেসবুকে কারও তথ্য শেয়ারের মধ্য দিয়ে অনুধাবন করবেন যে সে প্রেম ও মেকি ভালোবাসার বিদ্যালয় থেকে পাশ করে এসেছে বা এখনও সেখানে অধ্যয়নরত, তবে আপনি তার থেকে নিজের হাত ধুয়ে নিন। অন্য ভাষায়, তাঁকে একপাশে সরিয়ে দিন এবং তার কাছ থেকে সসম্মানে সরে আসুন।
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (3) 
বিশ্বস্ততা ও সত্যনিষ্ঠতা হলো অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার চাবিকাঠি। এটা গ্যারান্টি দেয়া যায় যে এই সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বন্ধুরা আপনাকে একদিন আঘাত দেবে না। কিন্তু মিথ্যাবাদী, বিশ্বাস ও আস্থাহীন লোক আপনার জন্য খামোখাই অকল্যাণ ডেকে আনবে। 
আপনি যদি ফেসবুকে এমন কাউকে দেখেন যে কিনা নাম প্রকাশ না করে কিংবা আকার-ইঙ্গিতে অন্যের কথা বলে বেড়ায় এবং এমনকি এর চেয়ে খারাপ ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো যে সে নিয়মিত মিথ্যা বলে। যেমন মানুষের প্রশংসা কুড়াবার জন্য অন্যের লেখা বা বক্তব্য চুরি করে অথবা নিজের ক্ষুদ্র পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারে সে মরিয়া, তবে আপনাকে নিশ্চিত হয়ে যেতে হবে যে তাকে আপনি ডিলিট করবেনই। তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক চ্ছিন্ন করতেই হবে। কারণ, তাঁর উপস্থিতি আপনার ক্ষতিই বয়ে আনবে। 
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (4) 
যে কারও ফেসবুক আপডেটগুলো আপনাকে উপকৃত করছে, হয়তো সে আপনার চেতনাকে শাণিত করছে কিংবা আপনার তথ্য বা জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করছে অথবা আপনাকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় আলোকিত করছে- তিনি ওই ব্যক্তি থেকে উত্তম যে তার নিত্য-নতুন আপডেটে শুধু প্রেম-ভালোবাসা কিংবা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাই শেয়ার করে। তখন আপনি আগের বন্ধুদের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। এমনকি যদি এর খেসারত হিসেবে অনেকেই আপনাকে শেয়ার না করে। আর আপনি দ্বিতীয় জন থেকে দূরে থাকুন। কারণ তাকে স্মরণ করে আপনার কোনো লাভ নেই। 
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (5) 
আমার প্রিয় বোন, মেয়েদের ফেসবুকে শুধু যদি মেয়েরা অংশগ্রহণ করে তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু যদি কোন ছেলের সাথে অত্যন্ত প্রয়োজনে অংশগ্রহণ করতেই হয়, তবে সেখানে যেন থাকে আপনার আত্মসম্মানবোধ। ছবি শেয়ার করা কখনো আপনার জন্য বৈধ হবে না। তার সাথেই শুধু অতীব প্রয়োজনীয় কোন আলাপ করতে পারেন যে আপনাকে সম্মান করে, আলাপ করতে চাইলে শালিন ও মার্জিত শব্দ চয়ন করে। ভদ্রোচিত পন্থায় আপনার সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করবে। অতএব সে আপনাকে সম্বোধন করায়, আপনার প্রশংসায় কিংবা অভিজ্ঞতায় মুগ্ধ হবার ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করবে না। কিন্তু আপনি যাকে বা যাদের দেখবেন ফেসবুকে রুচিহীনভাবে সম্বোধন করছে কিংবা শ্রদ্ধার সীমা থেকে দূরে গিয়ে সম্বোধন করছে, যেমন : হে চাঁদ, আমার মধু, আমার ভালোবাসা … ইত্যাদি বলছে, তখন আপনি বুঝে নেবেন যে সে বা তারা প্রেম-ভালোবাসার প্রতারক ভিখিরি। সে আপনাকে অসম্মান করবে, আপনার মর্যাদায় আঘাত দেবে। অতএব আপনি আর তাদেরকে আপনার সামনে থাকতে দেবেন না। এমনকি দ্বিতীয়বারের মতোও না। 
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (6) 
প্রত্যেকের নিজস্ব লক্ষ্য ও মনোযোগ রয়েছে। আপনার মনোযোগ ও রুচিকে সবসময় উন্নততর করুন। ফেসবুকে রুচিবোধ সম্পন্ন এবং সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির লোকদের ছেঁকে বের করুন। এমন ব্যক্তির সঙ্গ আপনাকে কোনো উপকারই দিতে পারবে না যে এই সাইটে শুধুমাত্র গেমস বা খেল-তামাশা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অথবা যে কি না গানের সিলেবল বা অংশ স্থাপন বা অধঃপতিত ছায়াছবির দৃশ্য উত্থাপন কিংবা অন্যদের নিয়ে ঠাট্টা-মশকতা বা জরুরি বিষয়ে খেল-তামাশা করা ছাড়া কিছুই জানে না। আপনার তালিকাটিকে পরিষ্কার করুন। তা শুধুমাত্র সুন্দর, দরকারী ও ফলপ্রদ বিষয় ছাড়া কিছুই বহন করবে না। সন্দেহ নেই এটি আপনার জন্য কল্যাণ নিয়েই ফিরে আসবে। কারণ, সুন্দর সুস্থ পরিবেশ আপনাকে সুখাদ্য সরবরাহ করবে আর অসুস্থ পরিবেশ আপনাকে কুখাদ্য দেবে। এখন সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।
 
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (7) 
কোনো বিষয়ে লাইক দিলে তা আপনার দিকে পথ দেখাবে। লাইক পাওয়া ব্যক্তিকে আপনার প্রতি আগ্রহী করবে। যদিও আপনি এমন ব্যক্তি হন যে পড়ে না, দেখে না, কিছু বোঝে না। যে শুধু নিজের ভালোলাগার ইষৎ প্রকাশ ঘটায় এবং খানিক বাদেই চলে যায়। অতএব আপনি কী বলছেন, কী পড়ছেন এবং কোনটাতে লাইক দিচ্ছেন তা জেনে বুঝেই দিন। 
 
ফেসবুকে কতই না পেইজ ওপেন করা হয়েছে খারাপ ও কুৎসিত, যা ধর্ম ও চরিত্র বিরোধী। আর কত জনকেই দেখা যায় নির্বুদ্ধিতাবশত এসব পেইজকে লাইক দেন। অথচ তারা খেয়াল করেন না যে এই লাইক দেয়াটা ওই পাতা উন্মোচনকারীকে এসব গাল-মন্দ ও ন্যাক্কারজনক কথাবার্তায় আরও উৎসাহিত করবে। তার লাইক দেয়ার মাধ্যমে বিষয়টি আরও প্রচার পাবে। আপনি ভালো করেই জানেন যে, অন্যায় করা যেমন অপরাধ অন্যায় পছন্দকারী হয়ে তার প্রসার করাও তেমনি অপরাধ। অথচ তারা বুদ্ধিমানের পরিচয় দিতে পারেন এ ব্যাপারে নিরবতা ও নিস্পৃহতা প্রদর্শন করে। এমন করা হলে চটুল প্রচারকামী ওই ব্যক্তি নিরুৎসাহিত হবে, তার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে, অধিক পাঠক টানা কিংবা অন্যকে ক্ষুব্ধ করার অশুভ অভিপ্রায়ে ধাক্কা লাগবে। 
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (8) 
অন্যদের সঙ্গে গিভ এন্ড টেক বা ‘দাও এবং নাও’ নীতি পরিহার করুন। কারণ আপনি যদি এই নীতির ওপর চলেন তাহলে অচিরেই আপনি এমন স্বার্থপর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পাবেন যে কি-না সবকিছুতেই বিনিময় প্রত্যাশা করে- এমনকি অনুগ্রহেরও।
ফেসবুকে আপনি ওই বিষয়গুলো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না যা নতুন কোনো একাউন্ট খোলা ছাড়াই অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা সম্ভব। এবং যাতে আপনার বা তাদের ওয়াল থেকে এ ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়।
বিনিময় বা বদলার জন্য অপেক্ষায় না থেকে সৌজন্যবোধের পরিচয় দিন। শেয়ারযোগ্য মনে করলে সেটি পোস্টকারীর সঙ্গে পরিচয় বা দীর্ঘ সম্পর্ক আছে কি-না তার প্রতি খেয়াল না করে অবশ্যই শেয়ার করুন। আর স্মরণ করুন যে আপনিও তো তাদের কারও পাতায় কোনো প্রকার জবাব দেন নি। অথচ তারপরও তারা বিষয়টি আপনার জন্য সংরক্ষণ করে গেছেন। বরং আপনি তাদেরটা পড়বেন আর তারাও আপনারটা পড়বে। আর এটিই সবচে গুরুত্বপূর্ণ!
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (9) 
আপনার ফেসবুক ওয়ালে শুধু তা-ই রাখবেন যা সুন্দর এবং কল্যাণকর। আর আপনি নিষিদ্ধ বিষয় থেকে হুঁশিয়ার থাকবেন। কারণ তা এক প্রকার গুনাহে জারিয়াহ বা চলমান পাপ কিংবা কোনো বিষণ্ণ বিষয়কে মনে করিয়ে দেবে। কারণ, এমন হতে পারে যে কোনো মেয়ের জন্য গানের কোনো অংশ রেখে দিলেন আর সে মারা গেল –আল্লাহ তার ওপর রহম করুন- তখন তা তার কোনো বন্ধু গ্রহণ করল যা সে অন্যদের মাঝে প্রচার করল। আর আপনি যদি মারা যান? তবে তা তো আরও উদ্বেগের বিষয়। 
সবসময় আপনি যদি মন্দ বর্জন না করতে পারেন তবে অন্তত চেষ্টা করুন। তা শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। তা অন্যের কাছে প্রচার করে নিজের গুনাহের পাল্লা ভারি করার কোনো প্রয়োজন নেই। 
 
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা : (10) 
আপনি ফলবতী গাছ হোন, যার ছায়া অন্যদেরকে অজ্ঞতার তাপ থেকে রক্ষা করে। যার ফল অবসরের ক্ষুধা মেটায়। আপনার বন্ধুরা তথ্য দেবার পর তাদের জন্য উপকারী বিষয় উপস্থাপন করুন। তাদের কষ্ট বেদনায় আপনার সম্প্রদায়কে শরীক করুন, তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় এবং তাদের দেশের চিন্তা-পেরেশানী আপনার ভাইদের জানান। আপনি সবার কাছে থাকুন। একে অন্যের সাথে আপনার লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষা করুন। তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন না। তাদের সমালোচনা করবেন না। কিংবা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাবেন না। 
পাঠক, পরিশেষে জেনে রাখুন, আপনি নিজের জীবনের পাতাগুলো দিয়ে অমর হতে পারেন। সম্মানের সঙ্গে আপনি আলোচিত হতে পারেন। এমনকি মৃত্যুর পরও। অতএব আপনার ফেসবুকের পাতাটিকে বানান ইসলামের ও শান্তির এবং সৌন্দর্য ও ভালোবাসার। এমন পাতা যা আপনার নাম ও কীর্তিতে সদা সর্বদা আলোচিত ও স্পন্দিত হতে থাববে। সর্বোপরি মনে রাখবেন আপনার প্রতিটি কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর আমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রতিটি সময়ের হিসেব দিতে হবে। 
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সবাইকে প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো গ্রহণ করার এবং মন্দ দিকগুলো বর্জন করার তাওফীক দিন। সকল মন্দ থেকে বাঁচার এবং কল্যাণে শরীক তাওফীক দান করুন। প্রতিটি সময়কে আখিরাতের সঞ্চয় বাড়ানোর কাজে ব্যয় করবার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন। 
ইন্টারনেট অবলম্বনে
- আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

গীবতের ভয়াবহতা

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আরবরা সফরে গেলে একে অপরের খিদমত করত। আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে একজন লোক ছিল যে তাদের খিদমত করত। তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর জাগ্রত হলে লক্ষ করলেন যে, সে তাদের জন্য খাবার প্রস্ত্তত করেনি (বরং ঘুমিয়ে আছে)। ফলে একজন তার অপর সাথীকে বললেন, এতো তোমাদের নবী (ছাঃ)-এর ন্যায় ঘুমায়। অন্য বর্ণনায় আছে তোমাদের বাড়িতে ঘুমানোর ন্যায় ঘুমায় (অর্থাৎ অধিক ঘুমায় এমন ব্যক্তি)। 

অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে বললেন, তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে বল যে, আবুবকর ও ওমর (রাঃ) আপনাকে সালাম প্রদান করেছেন এবং আপনার নিকট তরকারী চেয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, যাও, তাদেরকে আমার সালাম প্রদান করে বলবে যে, তারা তরকারী খেয়ে নিয়েছে। (একথা শুনে) তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার নিকট তরকারী চাইতে ওকে পাঠালাম। অথচ আপনি তাকে বলেছেন যে তারা তরকারী খেয়েছে। আমরা কি তরকারী খেয়েছি? তিনি (ছাঃ) বললেন, তোমাদের ভাইয়ের গোস্ত দিয়ে। যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোস্ত দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেন, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি (ছাঃ) বললেন, না বরং সেই তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮)। 

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, ‘আপনার জন্য ছাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট’। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ছাফিয়া বেঁটে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহ’লে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে’। 

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি করলাম। তিনি বললেন, ‘কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পসন্দ করি ন’ (আবুদাউদ হা/৪৮৭৭, সনদ ছহীহ)। 

কায়স বলেন, আমর ইবনুল আছ (রাঃ) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথীসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়, তবুও তা কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম’ (আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩৬, সনদ ছহীহ)। 

মূল/সংগ্রহ: ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া ডট নেট থেকে। 

প্রকৃতির মহৌষধ মধু

বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে সিনা তার বিশ্বখ্যাত Medical test book ‘The canon of Medicine’ এ রোগের প্রতিষেধক হিসাবে মধু ব্যবহারের সুপারিশ করেছেন। তিনি মধুর উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন, মধু মানুষকে সুখী করে, পরিপাকে সহায়তা করে, ঠান্ডার উপশম করে, ক্ষুধা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও তীক্ষ্ণ করে, জিহবা পরিষ্কার ও যৌবন রক্ষা করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে মধু : দুই চামচ দারুচিনি গুঁড়া ও এক চামচ মধু এক গ­াস হাল্কা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে মূত্রথলির জীবাণু ধ্বংস করে।

দাঁতের ব্যথা : দাঁতে ব্যথা হ’লে এক চামচ দারুচিনি গুঁড়া, পাঁচ চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে ব্যথা যুক্ত দাঁতের গোড়ায় ব্যবহার করলে উপশম হয়। ব্যথা না সারা পর্যন্ত দিনে তিনবার করে ব্যবহার করতে হবে।

ক্লোলেস্টেরল : দুই চা চামচ মধু ও তিন চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া ১৬ আউন্স পানি মিশিয়ে ক্লোরেস্টেরলের রোগীকে সেবন করালে দুই ঘণ্টার মধ্যে ক্লোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়। দিনে দু’বার সেবন করলে যে কোন ধরনের ক্লোলেস্টেরলজনিত রোগ উপশম হয়।

ঠান্ডা  লাগা : যারা সাধারণত তীব্র ঠান্ডায় ভোগেন তাদের এক টেবিল চামচ হাল্কা গরম মধু ও দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে দিনে একবার করে তিন দিন সেবন করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় ঠান্ডা, পুরন কাশি উপশম হয় ও সাইনাস পরিষ্কার করে।

পাকস্থলীর সমস্যা : দারুচিনি পাউডারের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে পাকস্থলীর ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকজনিত ব্যথা উপশম হয় এবং পাকস্থলীর মূল থেকে আলসার ভাল করে।

হার্টের রোগ : দারুচিনি গুঁড়া ও মধু এক সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে রুটির সাথে জেলির মতো মাখিয়ে সকালের পানি খাবারের সাথে খেতে হবে। এটা ধমনীর ক্লোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় ও রোগীকে হার্ট অ্যাটাক থেকে  রক্ষা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা : প্রতিদিন মধু ও দারুচিনি গুঁড়া সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

বদহজম : দুই টেবিল চামচ মধুর ওপর সামান্য দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খাবারের আগে সেবন করলে এসিডিটি কমে যায় ও ভারী খাবার হজম হয়।

ইনফ্লুয়েঞ্জা : মধু ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণু ধ্বংস করে।

ত্বকের ইনফেকশন : মধু ও দারুচিনি গুঁড়া সমপরিমাণে মিশিয়ে একজিমা, দাঁদ ও অন্য সব ধরনের ত্বকের ইনফেকশনে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। দিনে দু’বার সাত দিন থেকে শুরু করে প্রয়োজনে এক মাস ব্যবহার করতে  হবে।

ওযন কমানো : সকালে খাবারের আধ ঘণ্টা আগে খালিপেটে ও রাতে শোবার আগে মধু ও দারুচিনি গুঁড়া এক কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে। নিয়মিত পান করলে স্থুলকায় শরীরের ওযনও কমতে থাকে। এ মিশ্রণ নিয়মিত পানে উচ্চমানের খাবার খেলেও শরীরে চর্বি জমতে পারে না।

ক্যান্সার : সম্প্রতি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় পাকস্থলী ও হাড়ের ক্যান্সার সফলতার সাথে সারছে। যেসব রোগী এ ধরনের ক্যান্সারে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে এক টেবিল চামচ মধু ও এক চামচ দারুচিনি গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে দিনে তিনবার একমাস সেবন করলে আরোগ্য লাভ সম্ভব।

ক্লান্তি : ডা. মিল্টন গবেষণা করেছেন তিনি বলেন, এক গ­াস পানি অর্ধেক টেবিল চামচ মধু ও কিছু দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে সকালে দাঁত ব্রাশ করার পরও বিকেলে পান করলে সাতদিনের মধ্যে শরীর সতেজ হয়ে ক্লান্তি দূর হয়।

শ্রবণশক্তি কমে গেলে : যেসব রোগী কানে কম শোনে তাদের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ মধু ও দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে সকালেও রাতে পান করলে শ্রবণশক্তি বৃদ্ধি পায়।

পুড়ে গেলে : খাঁটি মধু পোড়ার উপর আলতোভাবে নিয়মিত লাগালে পোড়ার জ্বালা বন্ধ করে, ব্যথা দূর করে ও দ্রুত উপমশ হয়।

বিছানায় প্রস্রাব করলে : শিশুদের ঘুমানোর আগে এক চা চামচ মধু খাওয়ালে বিছানায় প্রস্রাব করা বন্ধ হয়।

অনিদ্রা : এক গ­াস দুধের সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে ভাল ঘুম হয়। ঘুমের পর শরীর সতেজ হয়, কর্মোদ্যম ফিরে পাওয়া যায়।

নাকের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া : এক বাটি গরম পানিতে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে বাটির ওপর মাথা রেখে শ্বাসের মাধ্যমে গন্ধ নিতে হবে ও বাটিসহ মাথা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। এতে অত্যন্ত ভাল ফল পাওয়া যায়।

ক্ষত : ক্ষতস্থানে মধু দ্বারা প্রলেপ দিয়ে বেঁধে দিলে খুব ভাল উপকার পাওয়া যায় ও নিয়মিত ব্যবহার করলে কোনও এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না।

অস্টিওপোরোসিস : প্রতিদিন এক চা চামচ মধুপান করলে ক্যালসিয়াম ব্যবহারে সহায়ক হয় ও অস্ট্রিওপোরোসিস রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ বয়সের লোকের জন্য মধু খুব উপকারী।

মাইগ্রেন : হাল্কা গরম পানি এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মাইগ্রেন ব্যথার শুরুতে চুমুক দিয়ে পান করতে হবে। ২০ মিনিট পরপর পান করতে হবে এতে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়।
মোটকথা প্রকৃতির দান মধুর উপকারিতার শেষ নেই। আজকাল অনেকেই নিজ নিজ বাড়িতে মধুর চাষ করতে শুরু করেছেন। এটা ভাল লক্ষণ। কারণ বাজারে আজকাল খাটি ও ভাল মধু পাওয়া কঠিন।
-আফতাব চৌধুরী
মূল/সংগ্রহ: ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া ডট নেট থেকে

ইসলাম বিরোধী পেজ/ওয়েবসাইট দেখলে কি করবেন?

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-


ENGLISH VERSION । অনুবাদঃ আকিব জাভেদ
ভাই ও বোনেরা, অবিশ্বাসীদের মধ্যে যারা উপহাস ও পরনিন্দা করতে ভালবাসে, তারা একের পর এক এসব ইসলাম বিরোধী কাজ করতেই থাকবে, কারণ অন্যের অবমাননা এবং অন্যকে গালমন্দ ব্যাতীত তারা আর কিছু পারেনা। আমরা তাদের এসব কাজে যত বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাব, তারাও শয়তান দ্বারা এসব কাজের প্রতি তত বেশি উৎসাহিত হবে। মনে রাখবেন, আমাদেরকে ক্রোধান্বিত করা এবং আমাদের দা’ওয়াহ সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়াই তাদের মূল চক্রান্ত।
 ফেসবুকে আমরা যখনই কোন ইসলাম বিরোধী পেজ দেখি, আমরা প্রথমেই বন্ধুদের বলি সেটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে। কিন্তু কজনই বা উপলব্ধি করেন যে এতে  আসলে ওই নির্দিষ্ট পেজ/গ্রুপটিকে সাহায্য করা হচ্ছে, তাদের বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে??
 বর্তমানের ক্লিক নির্ভর ইন্টারনেট জগতে, বেশিরভাগ মানুষই যা করেন, তা হল, ওই ওয়েবসাইট/পেজটির ইউ.আর.এল (URL) এ ক্লিক করেন। যার ফলে পেজটির হিট সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং পেজটির কর্তাদের উদ্দেশ্যও সফল হয়। দ্বিতীয়ত, এই হিট সংখ্যা বাড়ার মধ্য দিয়ে সার্চ ইঞ্জিনে স্থান পেতেও পেজটির সুবিধা হয়।তৃতীয়ত আপনি যখন ঐ পেজ ওপেন করলেন, এবং বিভিন্ন স্ট্যাটাস/ছবিতে কমেন্ট করলেন, ঐ সব নোটিফিকেশন আপনার বন্ধুদের ফেসবুক হোমপেজে দেখাবে। আপনি আপনার নিজের শত্রুকে তার হাতিয়ার তৈরি করতে সাহায্য করলেন!!
 ফেসবুকে একটি পেজ/গ্রুপ খোলাটা অনেক সহজ। কিন্তু ওই পেজের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করাটা অনেক কঠিন। ইসলাম বিরোধী এই পেজগুলো আশানুরূপ সাড়া না পেলে অচিরেই নিষ্প্রভ হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি সবাইকে এগুলোর ব্যাপারে বলে বেড়াতে থাকেন, তাহলে নিজের অজান্তেই আপনি তাদের প্রচারণার কাজ করছেন। এবং এটাই তারা চায়।
 আপনি যদি কাউকে একটি নির্দিষ্ট  পেজ/গ্রুপ/সাইটে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে চান, সবচেয়ে সহজ উপায় হল, তাকে এ ব্যাপারে কিছুই না বলা।
সি.এন.এনের মত সুপ্রতিষ্ঠিত কোন ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে একটি ‘প্রটেস্ট ক্যাম্পেইন’ (Protest Campaign) করা বেশ যৌক্তিক। কিন্তু অধিকাংশ সাইটের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। আপনার উচিৎ পেজটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা। এটিকে অবহেলার মরণ মরতে দেওয়া। যত দ্রুত এটি আকর্ষণ হারাবে, তত দ্রুত এই দানবের বিনাশ ঘটবে।
 সুতরাং পরবর্তীতে আপনি যখনই কোন ইসলাম বিরোধী পেজ/গ্রুপ এর সতর্কবার্তা পাবেন, সাথে সাথে তা মুছে ফেলবেন। যদি প্রেরককে কোন উত্তর পাঠাতে চান তাহলেও ওই সতর্কবার্তার মূল পাঠ্য (Original text)  সংযোজন করবেননা, কারণ এতেও সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে তারা সহায়তা পাবে।
 সম্প্রতি ফেসবুকে বহু সংখ্যক ইসলাম বিরোধী পেজ/গ্রুপ খোলা হয়েছিল কিন্তু সেগুলো অল্প সময়েই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কারণ, সৌভাগ্যবশত, সেগুলো আগ্রহীদের চোখে পড়েনি এবং সতর্কবার্তার মাধ্যমে সেগুলোর প্রচারণাও হয়নি।

 

তাহলে, এর বিকল্প কি?

 ১।  পেজটির বিরুদ্ধে আমাদের রিপোর্ট করে দেয়া উচিত; অন্যদের জানানো ছাড়াই
আমাদের পছন্দের কোন ইসলামিক পেজের কোন লিঙ্ক তৎক্ষণাৎ শেয়ার করা উচিৎ এবং বন্ধুদেরও তাতে যোগদান করতে বলা উচিৎ।

 

অতঃপর, এর প্রাপ্তি কি হবে?

১। পেজটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা হবে।
২। আমরা অনিচ্ছাসত্ত্বে অথবা অজান্তে এর প্রচারণার সাথে সংশ্লিষ্ট হব না।
৩। আমরা ওই নির্দিষ্ট পেজ এর ক্লিক/লাইক এর সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হব, এতে করে পেজটি ডিলিট হবারও কিছু সম্ভাবনা থাকে।
। অনেক আজেবাজে জিনিসপত্র দেখা থেকে আমাদের ইসলামের ভাইবোনদের রক্ষা করতে পারব।
। ভাইবোনদেরকে রাগান্বিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারব।
। ইসলামিক শিক্ষার বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত রাখতে পারব।
। পছন্দের ইসলামিক পেজে লিঙ্ক দিয়ে এবং বন্ধুদের তাতে আহ্বান করে আমরা আসলে দা’ওয়াহর কাজটি করব – যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক।
। যেসব বন্ধুরা ইসলামিক পেজগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমল করে, কোন অতিরিক্ত প্রচেষ্টা ছাড়াই ইনশাল্লাহ আমরাও তাদের সমপরিমাণ নেকী অর্জন করব।
। সময়কে বিজ্ঞতার সাথে ব্যবহার করতে সক্ষম হব।
১০। আমরা সকলে ইনশাল্লাহ আরও ভাল মুসলিম হয়ে উঠতে সক্ষম হব।
 আসুন এখন থেকেই আমরা এই জিনিসগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি, যাতে অন্ততপক্ষে ফেসবুকে হলেও কোন ইসলাম বিরোধী প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে পারি।
 ইন্টারনেটে আপনার শক্তির সর্বোৎকৃষ্ট প্রয়োগ হবে তখনই, যখন আপনি সেটিকে কোন ভাল ইসলামিক সাইটের কাজে ব্যাবহার করবেন। আসুন ভালোর মাধ্যমে খারাপকে বিতাড়িত করি।
 এই পোস্টটি আপনার প্রোফাইল/ইসলামিক পেজে শেয়ার করার মাধ্যমে সকলকে জানাতে সাহায্য করুন। জাযাকাল্লাহু খাইরান এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবচেয়ে ভাল জানেন।
লেখকঃ শাকির পারভেজ খান, সাদমান সাকিব এবং ‘Manners in Islam

 মূল/সংগ্রহ/উৎস:কুরআনের আলো ডট কম

ঈর্ষা

সা’দ চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে দেখতে পেল মায়া ড্রয়িংরুমের জানালার সামনে উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে- রাতের অন্ধকারের পটভূমিতে টেবিল ল্যাম্পের আলোয় পরীর মত লাগছে ওকে। সোফায় বসে পা দু’টো একটা মোড়ার ওপর তুলে দেয়া, দু’বাহু পরস্পরকে জড়িয়ে মুকুটের মত ধারণ করে আছে ওর প্রিয় মুখটা, পাশে টেবিলের ওপর একটা বই খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। বৌটাকে এভাবে একা বসে থাকতে দেখে দুনিয়াদারী কাজকর্ম সব ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে সা’দের। একটা মাত্র বৌ, তাও নতুন- কত, সবেমাত্র পনেরো বছর হোল, ওর তো ইচ্ছে মায়ার সাথে
অনন্তকাল কাটানোর- কিন্তু একসাথে থাকা হচ্ছে কই? কাজ থেকে অবসরই যে মিলেনা! সা’দের শব্দ পেয়ে হাসিমুখে উঠে আসে মায়া, ‘আসসালামু আলাইকুম!’
এ কি? ওর মুখে হাসি কিন্তু চোখের কোণে চিক চিক করছে দু’ফোঁটা অশ্রু। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে সা’দের। সে অস্থির হয়ে ওঠে, ‘মায়া, আমি কি তোমাকে কোনভাবে কষ্ট দিয়েছি?’
‘সে কি? হঠাৎ এ’কথা কেন?’, অবাক হয় মায়া।
‘তোমাকে কেউ কিছু বলেছে?’
‘কে আবার আমাকে কি বলবে?’
‘কোথাও কোন দুঃসংবাদ পেয়েছ?’
‘তুমি হঠাৎ এমন জেরা করা শুরু করলে কেন? কোন সমস্যা?’, কিছুই বুঝতে পারেনা মায়া।
‘তোমার চোখে জল কেন?’
‘কি!’, আশ্চর্য হয় মায়া, আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোণ পরখ করে লজ্জা পেয়ে যায়, ‘ও কিছু না, তুমি খেতে এসো’।
সা’দের মনের ভেতর খচখচ করে। খেতে বসে বার বার মায়াকে বলে, ‘অ্যাই কি হয়েছে বলনা! তুমি কাঁদছিলে কেন?’
মায়াও ভীষণ লজ্জা পেয়ে বার বার বলে, ‘আমি কাঁদছিলাম না’।
সা’দ জানে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে মায়ার ভীষণ আপত্তি। সে সবসময় পরিবারের সবাইকে ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে বেঁধে রাখতে চায়, কিন্তু নিজের সমস্যাগুলো কারো সামনে তুলে ধরতে চায়না, ওর সামনেও না। তাই তো এতবার করে জিজ্ঞেস করা।
খাওয়ার পর দু’জনে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে গল্প করার জন্য। এই সময়টুকু একান্তই ওদের নিজেদের। কোনদিন বাসায় মেহমান থাকলে কিংবা দাওয়াতে গেলে এই সময়টা মার যায়- খুব আফসোস হয় সা’দের। কিছুক্ষণ গল্প করল ওরা- সারাদিন কে কি করেছে, বাবামা কেমন আছেন, বাচ্চারা কি কি দুষ্টুমী করল, সা’দের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ওরা কিভাবে ঘুমিয়ে পড়ল ইত্যাদি। এত কথার ভিড়েও প্রশ্নটা আবার সা’দের মাথায় চেপে বসল, মায়ার চোখে জল কেন? ওকে সা’দ কখনো সাধারন মেয়েদের মত কাঁদতে দেখেনি, বরং সা’দ ভেঙ্গে পড়লে মায়াই সাহস আর সংকল্প দিয়ে ওকে টেনে তুলেছে বার বার। সে যে কাঁদতে পারে তাই তো সা’দ জানতোনা!
‘মায়া!’
‘হুঁ!’
‘তোমার চোখে পানি দেখলাম, ভাল লাগছেনা। বলবেনা কি হয়েছে?
‘আমি তো প্রায়ই চোখের পানি ফেলি, তুমিই দেখতে পাওনা। আজ একদিন দেখে ফেলেই অস্থির হয়ে গেলে?’ দুষ্টুমী করে মায়া।
সা’দের চোখে আতঙ্ক দেখে দুষ্টুমী উড়ে পালায় মায়ার। নাহ, এ’লোক দুষ্টুমীও বোঝেনা!
‘আচ্ছা, বলছি। হাসবেনা কিন্তু’।
সামনের দিকে ঝুঁকে আগ্রহ প্রকাশ করে সা’দ।
‘মুস’আব (রা)র জীবনী পড়ছিলাম। কেন যেন চোখে পানি চলে এলো’।
হাসি পায়না সা’দের, একটা সুক্ষ্ণ ঈর্ষাবোধ খোঁচা দেয় মনের ভেতর, ‘ও! সেই হ্যান্ডসাম সাহাবী?’
মায়া আবেগের সাথে কথা বলতে থাকে যেন শুনতে পায়নি, ‘তিনি সেই সাহাবী যিনি ইসলামের জন্য সকলপ্রকার প্রাচুর্য আরাম আয়েশ ত্যাগ করেন, মদীনায় রাসূল (সা)এর আগমনের পটভূমি রচনা করার দায়িত্ব পান, যিনি রাসূল (সা) কে রক্ষা করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছান, যার জীবনের শেষমূহূর্তে বলা কথাগুলো আল্লাহ কুর’আনের অন্তর্ভুক্ত করে দেন, যার মৃত্যু রাসূল (সা)কে কাঁদায়।’
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মায়া, ‘আমার ভীষণ ঈর্ষা হচ্ছে ওনার জীবনী পড়ার পর থেকে’।
এবার সা’দের অবাক হবার পালা, ‘কেন? শ্রদ্ধা বোধ হতে পারে, মায়া লাগতে পারে, কিন্তু ঈর্ষা কেন বুঝলাম না’।
‘আচ্ছা শোন। এটা একটা কথা হোল, আল্লাহ একটা মানুষকে একই সাথে জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, ব্যাবহার, সৌন্দর্য, প্রাচুর্য সবকিছু দিয়ে দিলেন; আর উনিও সুন্দর সবকিছু তাঁর রাব্বের জন্য উৎসর্গ করে দিলেন! এই কম্পিটিশনে আমাদের টেকার কোন সম্ভাবনা আছে?’
সা’দ ভেবে দেখল, ‘হুমম। প্রথমত এই জিনিসগুলোর মধ্যে সবগুলো আমাদের নেই বা ঐ পরিমাণে নেই। দ্বিতীয়ত, যতটুকু আছে তার সবটুকুই আমরা খরচ করছি পৃথিবীর আরাম আয়েশের জন্য। এভাবে ভেবে দেখা হয়নি’।
‘তারপর দেখ, তিনি একটি নতুন জায়গায় অপরিচিত লোকজনের মাঝে ইসলাম প্রচার করার কাজ নিয়ে চলে যান এবং অল্প সময়ে পরিস্থিতি অনুকুলে নিয়ে আসেন। আমরা কি এমনকি আমাদের সন্তানদের ইসলামে প্রবেশ করার পেছনে এত সাধনা করি?’
‘তাই তো? সন্তানদের খাওয়াপরা, পড়াশোনা, ভবিষ্যত চিন্তা নিয়ে আমাদের ভাবনার অন্ত নেই কিন্তু তাদের আখিরাত নিয়ে তো আমাদের ভাবার সময় হয়না!’
‘তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে পলায়নপর যোদ্ধাদের বার বার আহ্বান করছিলেন, ‘আর মুহাম্মদ একজন রাসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়েছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদাপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদাপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করবেন’। ভাব তো, বিশৃংখল পরিবেশ, কেউ কেউ ধারণা করছে রাসূল (সা) হয়ত আর নেই তাহলে যুদ্ধ করে কি হবে, সব এলোমেলো, এর ভেতর একজন দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে আমরা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করি, রাসূল (সা) থাকুন বা না থাকুন ইসলামকে টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব! আর তারপর তিনি রাসূল (সা)কে রক্ষা করতে করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর কথাগুলো তাঁর মহান বানীর অংশ হিসেবে গ্রহন করে নিলেন। এর সাথে তুলনা করলে আমরা কোথায় স্থান পাই বল তো?’
‘আসলেই তো! আমরা তো নিজেদের কোনকিছুতে এক চুলও ছাড় দিতে রাজী না আল্লাহর দ্বীনের জন্য। আগে আমাদের প্রয়োজন, আরাম আয়েশ ঠিক থাকা চাই, তারপর সুযোগ থাকলে দ্বীনের কাজ। মনে হয় যেন আমাদের জন্য দুনিয়াটা ফরজ আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হোল একটা শৌখিন ব্যাপার, সময় থাকলে করা যাবে।’
‘হুমম, তাই ঈর্ষায় চোখে পানি চলে এসেছিল। তুমি তো জানো আমি ভীষণ কম্পিটিটিভ, হারতে পছন্দ করিনা মোটেই, তোমার কাছে ছাড়া। কিন্তু কিয়ামতের মাঠে এঁদের ডিঙ্গিয়ে যাবার উপায় তো নেইই, বরং এঁরা যে স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছেন তারপর বিচারে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এসব ভাবলেই কেন যেন চোখে পানি চলে আসে’, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মায়া।
সা’দকে ভাবনায় ডুবিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের গায়ে কাঁথা ঠিক আছে কিনা চেক করতে চলে যায় মায়া।
মায়া অন্যান্য মেয়েদের মত নয়। সা’দের চোখ দিয়ে না দেখলে সে সুন্দরী নয়। সবসময় গুছিয়ে থাকলেও স্বামীর জন্য সাজগোজ করা ছাড়া সে হালফ্যাশনের কোন তোয়াক্কা করেনা। ওর রান্না কোনক্রমে খাওয়া যায় যদিও সা’দের মুখে ওটা অমৃত মনে হয়, কোন শৌখিন রান্নাবান্না করার চেয়ে সে পড়তেই ভালবাসে বেশি। তবু কেন যে বৌটাকে এত ভাল লাগে সা’দের! এজন্যই কি যে সে প্রতিদিন ভোরে সা’দকে কপালে টিপ দিয়ে প্রভুর সান্নিধ্যে যাবার জন্য আহ্বান করে? নাকি এজন্য যে সে প্রতিদিন সৃষ্টিকর্তার বানী থেকে কিছু অংশ নিজে পড়ে, তারপর বাসার সবাইকে শোনায়? এজন্য যে সে সা’দের বাবামায়ের প্রতিটি প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখে, তার সন্তানদের গড়ে তোলার ব্যাপারে যত্নশীল বলেই সা’দ নিশ্চিন্তে এত রাত পর্যন্ত বাইরে কাজ করতে পারে? নাকি এজন্য যে মায়া প্রতিদিন ওর আখিরাতের মাপকাঠিটাকে একটু উঁচু করে দেয় যেটা অর্জন করার জন্য ওকে আরেকটু বেশি মনোযোগী হতে হয়, আরেকটু বেশি সচেষ্ট হতে হয়, গতকাল সে যেখানে অবস্থান করছিল তার চেয়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতে হয়? এই তো সেই সাথী যার সাথে একটি জীবন কাটালে তার যথাযথ মূল্যায়ন হয়না, যার সাথে থাকার জন্য প্রয়োজন অনন্তকাল!
- রেহনুমা বিনত আনিস

বেশ কিছু ইসলামিক সংগীত এর ডাউনলোড লিঙ্ক

  • আসসালামু আলাইকুম।
  • অনলাইনে ইসলামিক সংগীত খুজতে গিয়ে টিউনারপেজের এক ভাইয়ের(তাল পাতার সিপাহি) একটি পোস্ট চোখে পড়ল।তিনি অনেকগুলো ইসলামিক সংগীত একটি পোস্টে শেয়ার করেছেন।সেখান থেকেই নিয়ে আসলাম এই ডাউনলোড লিঙ্কগুলো।


এ্যালবাম: শুধু তোমাকেই মনে হয়

                                        আল কুরআনের পথ


 ফুলকুঁড়িদের গান
সাইফুল্লাহ মানসুর

সম্মিলিত
হামদ

নাতে রাসূল
মশিউর রহমান
মতিউর রহমান মল্লিক 

তারিক মুনাওয়ার 
ও নদী তুমি বইছো কেনো
হতাম যদি(নতুন)
আবুল কাশেম
সংগ্রহ:ডাউনলোড লিঙ্কগুলো নেয়া হয়েছে এখান থেকে
ডাউনলোডজনিত বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে মন্তব্য করে জানাতে পারেন।

আপনার ভালো লাগার কথা মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!!!

আসসালামু আলাইকুম।